logo
logo

সুরা ইয়াসিন কোরআনের হৃদয়

Blog single photo

সুরা ইয়াসিনের ফজিলত, গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। এই সুরার মহাত্ম্য সম্পর্কে রাসুল (সা.) অসংখ্য হাদিসে বলেছেন। নিচে কিছু ফজিলত দেওয়া হলো-

সুরা ইয়াসিন কোরআনের হৃদয়

হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন-

সব কিছুর মধ্যেই একটি হৃদয় আছে; কোরআনের হৃদয় হল সুরা ইয়াসিন।

[তাফসির-আল-সাবুনী খণ্ড ২]

এই হাদিসটি আমাদের দেখায় যে সুরা ইয়াসিন কতটা তাৎপর্যপূর্ণ । কারণ হার্ট আমাদের শরিরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, পুরো কার্যকারিতা হার্টের ওপর নির্ভর করে। একইভাবে, সুরা ইয়াসিন কোরআনের হৃদয় এবং প্রতিটি মুসলমানের জন্য এটি পড়া এবং বোঝা অপরিহার্য।

সুরা ইয়াসিন চমৎকার পুরস্কার লাভের মাধ্যম :

পবিত্র কোরআনের একটি শব্দ পড়লে আল্লাহর ১০টি নিয়ামত পাওয়া যাবে। সুরা ইয়াসিন পড়ার সময় একজন ব্যক্তি ১০ বার কোরআন পড়ার সওয়াব পাবেন। যেমন আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন :

যে ব্যক্তি সুরা ইয়াসিন পাঠ করে, আল্লাহ তাকে পুরো কোরআন পড়ার সমান সওয়াব দান করেন। (তিরমিজি ২৮১২)

সুরা ইয়াসিন গুনাহ মাফের মাধ্যম :

আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন :

যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য রাতে সুরা ইয়াসিন পাঠ করবে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন। (ইবনে হিব্বান, দারিমি ৩২৮৩-এ)

আপনি যদি মহান আল্লাহর কাছে আপনার গুনাহের জন্য ক্ষমা চাইতে চান তাহলে প্রতিদিন সুরা ইয়াসিন পড়ুন আল্লাহ অবশ্যই আপনার গুনাহ মাফ করবেন।

সুরা ইয়াসিন মৃত্যু-কষ্ট লাঘবের মাধ্যম :

হজরত আবু যর (রা:) বলেন, রাসুল সা. বলেছেন,

মৃত্যু পথযাত্রী ব্যক্তির কাছে সুরা ইয়াসিন পাঠ করলে তার মৃত্যু যন্ত্রণা সহজ হয়ে যায়। (মাজহারি)

তাছাড়া আরো একটি হাদিস আছে,

যারা মৃত্যুবরণ করছে তাদের ওপর ইয়াসিন পাঠ কর। -সানান আবি দাউদ

হযরত মা’কিল ইবনে ইয়াসার ( রা. ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

সুরা ইয়াসিন তোমাদের মুমুর্ষু ব্যক্তিদের নিকট পাঠ করো। -( আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাযাহ, মুসনাদে আহমাদ)

ইমাম আহমাদ (র.) বলেছেন- আমাদের প্রবীণরা বলতেন,

মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট সুরা ইয়াসিন পাঠ করা হলে আল্লাহ তাঁর কষ্ট লাঘব করে দেন। (তাফসিরে ইবনে কাসির, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা- ১৫৪ )

হাদিস থেকে প্রতীয়মাণ হয়, সুরা ইয়াসিন মৃত ব্যক্তির নিকট পাঠ করা বাঞ্ছনীয়। একজন মানুষ যে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছেন তার আধ্যাত্মিক সাহায্য এবং সান্ত্বনা দরকার সফল জগতের সহজে যাওয়ার জন্য।

তাই এই সময়ে যদি কোরআনের হৃদয় তেলাওয়াত করা হয়, এটি যন্ত্রণাদায়ক প্রক্রিয়ায় শান্তি ও আরাম আনে।

সুরা ইয়াসিন চাহিদা পূরণের মাধ্যম

মানুষ মাত্রই অবস্থান অনুযায়ী নানা ধরনের অভাব-অনটনে বা হাজত থাকে। শুধু পরিশ্রম করে কিংবা অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে অভাব-অনটন থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। পরিশ্রমকারি বা অর্থ উপার্জনকারির ওপর আল্লাহর বিশেষ রহমত থাকতে হয়।

সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত-বরকত আসে। সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করলে মনের হাজত বা মনের আশা পূর্ণ হয়।

হজরত আতা বিন আবি রাবাহ (রা.) বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন,

‘যে ব্যক্তি দিনের বেলায় সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করবে, তার সব হাজত পূর্ণ করা হবে।’ (সুনানে দারেমি : ৩৪৬১)।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের রা. বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি অভাব-অনটনের সময় সুরা ইয়াসিন পাঠ করে, তাহলে তার অভাব দুর হয়, সংসারে শান্তি ও রিজিকে বরকত লাভ হয়। (মাজহারি)

ইয়াহইয়া ইবনে কাসির বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে সুরা ইয়াসিন পাঠ করবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত সুখে-স্বস্তিতে থাকবে। যে সন্ধ্যায় পাঠ করবে সে সকাল পর্যন্ত শান্তিতে থাকবে (মাজহারি)।

সব ধরনের ভয় দূর করে

মানুষের মনে নানা ধরনের ভয় থাকে। প্রতিদিন এই সুরা পাঠ করলে আপনার সমস্ত ভয় দূর হয়।

আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) বলেন :

এবং আমি কোরআনকে বোঝার জন্য এবং স্মরণ রাখার জন্য সহজ করে দিয়েছি, তাহলে উপদেশ গ্রহণকারি কেউ আছে কি? (৫৪:১৭)

এই আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, কোরআনের যে কোনো সুরা মুখস্থ করা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন। আর সুরা ইয়াসিনা কোরআনের সবচেয়ে সহজ সুরাগুলির মধ্যে একটি । এটি খুব দীর্ঘ নয়, আয়াতগুলি উপলব্ধি করা এবং মুখস্থ করা তুলনামূলকভাবে সহজ।

বাকিটা নির্ভর করে আপনি কতটা অনুপ্রাণিত এবং কতটা প্রচেষ্টা করতে ইচ্ছুক তার ওপর। আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন তাহলে বলতে পারি এই সুরাটি মুখস্থ করতে ৫-১০ দিন সময় লাগতে পারে।

সুরা ইয়াসিন আল্লাহর চূড়ান্ত ও সর্বোচ্চ ক্ষমতা বর্ণনা করে। নিয়মিতি সুরা ইয়াসিন, সুরা মূলক, আয়াতুল কুরসি ইত্যাদি তিলাওয়াত করুন, এটি আপনার ওপর মহান আল্লাহর নিয়ামত দান করবে। এটি আপনার বিশ্বাসকেও মজবুত করে এবং আল্লাহর সাথে আপনার সম্পর্ককে দৃঢ় করে।

আপনার মতামত লিখুন

logo
Top