আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) একদিন মসজিদে ঢুকলেন, তখন একজন সাহাবি এসে নামাজ আদায় করলেন। তারপর তিনি এসে নবিজিকে (সা.) সালাম করলেন। নবিজি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, আবার গিয়ে নামাজ আদায় করো, তুমি নামাজ আদায় করোনি।
সাহাবি ফিরে গিয়ে আগের মত নামাজ আদায় করে আবার নবিজিকে (সা.) সালাম করলেন। নবিজি আবার বললেন, ফিরে গিয়ে নামাজ আদায় করো, তুমি নামাজ আদায় করোনি।
এভাবে তিনবার তিনি তাকে ফিরে গিয়ে নামাজ আদায় করতে বললেন।
সাহাবি বললেন, সেই মহান সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন, আমি তো এর চেয়ে সুন্দর করে নামাজ আদায় করতে পারি না। আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন
নবিজি বললেন, যখন তুমি নামাজের জন্য দাঁড়াবে, তখন তাকবির বলবে। তারপর কুরআন থেকে কিছু আয়াত পড়বে যা তোমার জন্য সহজ হয়। তারপর রুকুতে যাবে এবং ধীরস্থিরভাবে রুকু আদায় করবে। তারপর রুকু’ থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর ধীরস্থিরভাবে সিজদা করবে। এরপর সিজদা থেকে উঠে স্থিরভাবে বসবে এবং পুনরায় সিজদায় গিয়ে ধীরস্থিরভাবে সিজদা করবে। এভাবে পুরো নামাজ আদায় করবে। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
আমরা অনেকেই বলি, ‘আমার এত কাজ, আমি কীভাবে ধীরে চলব? আমাকে তো গতি বাড়াতেই হবে!’ কিন্তু এই দ্রুতগতির জীবন আমাদের বার্নআউটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বার্নআউট শুধু ক্লান্তি নয়—এটি মানসিক নিঃশেষতা, উদাসীনতা ও উৎপাদনশীলতার হ্রাস। একজন স্প্রিন্টার দ্রুত দৌড়ায়, কিন্তু অল্প দূরত্বের জন্য। ম্যারাথন দৌড়বিদ দীর্ঘ পথ পাড়ি দেন, কারণ তাঁরা গতি নিয়ন্ত্রণ করেন। জীবনও একটি ম্যারাথন। হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ-এর ‘টেকসই কর্মক্ষমতা’ ধারণা বলে, দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের জন্য ধীর কিন্তু টেকসই গতি প্রয়োজন। ধীর নামাজ আমাদের জীবনের এই ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে।
আমরা মুসলিম হিসেবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সংযোগের সুযোগ পাই। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, আমরা প্রায়ই নামাজ দ্রত পড়ি, জীবনের অন্য কাজে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। যিনি আমাদের জীবনের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন, তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতে তাড়াহুড়া করে আমরা এমন কাজের দিকে ছুটি, যা আল্লাহ ছাড়া সম্পন্ন হওয়া সম্ভব নয়। নবীজি (সা.) এই বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন। এক ব্যক্তি জলদি করে নামাজ পড়ছিলেন। নবীজি (সা.) তাকে তিনবার বললেন, ‘ফিরে গিয়ে নামাজ পড়ো, কারণ তুমি নামাজ পড়োনি।’ অবশেষে তিনি বললেন, ‘নামাজে দাঁড়ানোর সময় অজু ভালোভাবে করো, কিবলার দিকে মুখ করো, তাকবির বলো, কোরআন থেকে যা পারো তিলাওয়াত করো, তারপর রুকুতে যাও যতক্ষণ না তুমি রুকুতে স্থির হও, তারপর সোজা হয়ে দাঁড়াও, তারপর সিজদায় যাও যতক্ষণ না তুমি সিজদায় স্থির হও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭৫৭)
সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ