logo
logo

হযরত আবু বকর (রা:) কে খলিপা নির্বাচনের যথার্থতা

Blog single photo

হযরত আবুবকরের নির্বাচনে মুসলিম বিশ্বের প্রথম ভয়াবহ সংকট দূরীভূত হয়। কতকগুলো কারণে তাঁর খিলাফত প্রাপ্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ন্যাসঙ্গত ছিল; যেমন- (১) হযরত আবুবকরকে খলিফা নির্বাচনের ব্যাপারে নবী করীমের সুস্পষ্ট কোন নির্দেশ না থাকলেও পরোক্ষ ইঙ্গিত ছিল। কারণ, হযরত আবুবকরকে রাসূলের অসুস্থতার সময় নামায পরিচালনা করতে বলা হয়। উল্লেখযোগ্য যে, ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানই কেবলমাত্র ইমামতি করবার যোগ্য ছিলেন; (২) নবী করিম একবার সাহাবীদের উদ্দেশ করে বলেন, “নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মধ্যে প্রেম-ভক্তিতে আবুবকরকে শ্রেষ্ঠ মনে করি। আজ থেকে এই মসজিদের সমস্ত দরজা বন্ধ হয়ে যাক; শুধু খোলা থাকুক আবুবকরের দরজা।” এতে হযরত আবুবকরের ইসলাম-প্রীতি ও রাসূলের প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা এবং আনুগত্য প্রমাণিত হয়; (৩) খলিফা পদপ্রার্থী ব্যক্তিদের মধ্যে হযরত আবুবকরই ছিলেন সর্বাপেক্ষা যোগ্য। বয়োজ্যেষ্ঠতা, অভিজ্ঞতা, ধর্মপরায়ণতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, স্থিরমতিত্ব, বিজ্ঞজনোচিত সূক্ষ্ণদৃষ্টি, ব্যক্তিগত প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে হযরত আবুবকর নির্বাচিত হন; (৪) আমীর আলী হযরত আলীর পক্ষ সমর্থন করে বলেন, “হযরত আলী খিলাফতে অধিষ্ঠিত হলে পরবর্তীকালের অনেক ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক তিক্ততা ও রক্তক্ষয় এড়ানো সম্ভব হত।” এই মতবাদ খুব ভ্রান্তিকর, কারণ হযরত আবুবকরের তুলনায় হযরত আলী ছিলেন বয়সে তরুণ এবং অভিজ্ঞতায় অপরিপক্ক। হযরত আলীর মধ্যে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা এবং প্রশাসনিক দক্ষতার যথেষ্ট অভাব ছিল। উপরন্তু, ন্যায়সঙ্গত দাবিদার (Legitimists) দলের একমাত্র যুক্তি ছিল হযরত আলী ছিলেন রাসূলে করীমের জামাতা। কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (স) স্বজনপ্রীতিকে প্রশ্রয় না দিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে কায়েম করবার জন্য তিনি উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন নি।

খিলাফতে অধিষ্ঠিত হবার পর হযরত আবুবকর (রা) কে নানারূপ জটিল সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। জনৈক আরব ঐতিহাসিক তৎকালীন রাজনৈতিক অবস্থার কথা উল্লেখ করে বলেন, “আরব সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহের অগ্নিশিখা প্রজ্বলিত হয়ে উঠে। ধর্মদ্রোহিতা এবং অসন্তোষ দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিধর্মী এবং ইহুদীগণ সুযোগের অপেক্ষায় ছিল এবং মুসলমানগণ রাখালবিহীন মেষকুলের ন্যায় ইতস্তত বিচরণ করতে থাকে। তারা সংখ্যায় ছিল নগণ্য কিন্তু তাদের দুশমন ছিল সংখ্যাতীত।” নব-দীক্ষিত আরব বেদুঈনদের অনেকে ইসলাম বর্জন করে পৌত্তলিকতায় ফিরে যায়। রাসূলে করীমের অন্তর্ধানে সমগ্র আরব ভূ-খণ্ডে বিদ্রোহ, অসন্তোষ, হিংসা, বিদ্বেষ, কোন্দল, উস্কানিমূলক তৎপরতা উত্তেরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। হযরত মুহাম্মদ (স) এর জীবদ্দশায় তাঁর পালিত পুত্র জায়েদ-বিন-হারিস মুতা যুদ্ধে নিহত হন। হারিসের মৃত্যুর প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য তিনি সিরিয়ায় একটি যুদ্ধাভিযান প্রেরণ করতে মনস্থ করেন এবং হারিসের পুত্র উসামাকে উক্ত বাহিনীর সেনাধ্যক্ষ মনোনীত করেন। রাসূলে করীমের মৃত্যুতে উসামার অভিযান স্থগিত হয়ে যায় এবং হযরত আবুবকরের খিলাফতে তিনি পুনরায় অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকেন।

আপনার মতামত লিখুন

Top