logo
logo

সূরা কাহাফ এর ৪ টি কাহিনী ও ৪ টি শিক্ষা

Blog single photo

সুরাটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য আখিরাত এবং দুনিয়ার পরীক্ষা আমাদেরকে সে পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারে না। মহানবী (সা.) বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহফের প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে সুরক্ষিত থাকবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮০৯)

১. অটল ঈমান


এই সুরার প্রথম কাহিনিতে গুহাবাসী যুবকদের (আসহাবে কাহফ) কথা বলা হয়েছে, যারা ধর্মের কারণে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তাদের শহরের মূর্তিপূজার বিরোধিতা করে একমাত্র আল্লাহর উপর ঈমান আনার কারণে তারা নির্যাতনের শিকার হন।

আল্লাহ বলেন: ‘আমি তাদের হৃদয়কে দৃঢ় করে দিলাম, যখন তারা দাঁড়িয়ে বলেছিল, ‘আমাদের রব আসমান ও জমিনের রব। আমরা কখনো তাঁকে ছাড়া অন্য কোনো উপাস্যকে ডাকব না।’ (সুরা কাহফ, আয়াত: ১৪)

এই আয়াত বলছে, তারা সত্যের জন্য দাঁড়ানোর পর আল্লাহ তাদের হৃদয়কে দৃঢ় করেন। অর্থাৎ, আল্লাহর সাহায্য আসবে আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করার পর। তারা তাদের ঈমান রক্ষার জন্য পরিবার, সম্পদ ও সমাজ ছেড়ে গুহায় আশ্রয় নেন। আল্লাহ তাদের ৩০৯ বছর ঘুমিয়ে রাখেন, যাতে তাদের ঈমান অক্ষত থাকে।‘আমাদের রব আসমান ও জমিনের রব। আমরা কখনো তাঁকে ছাড়া অন্য কোনো উপাস্যকে ডাকব না।সুরা কাহফ, আয়াত: ১৪এই যুবকরা অটল ঈমানেনর পরিচয় দিয়েছেন। নবীজি (সা.) বলেছেন: ‘আল্লাহর প্রতি সচেতন থাক, তিনি তোমার দেখাশোনা করবেন। তাঁর কাছে সাহায্য চাও। জেনে রাখ, পুরো দুনিয়া তোমাকে সাহায্য করতে চাইলেও আল্লাহর লিখিত ছাড়া কিছু করতে পারবে না, এবং তারা তোমার ক্ষতি করতে চাইলেও আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কিছু করতে পারবে না।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস: ২,৫১৬)


২. নম্রতা

দ্বিতীয় কাহিনিতে দুই বাগানের মালিকের কথা বলা হয়েছে, যারা সম্পদের কারণে পরীক্ষার মুখে পড়েন। তার মধ্যে একজন তার প্রতিবেশীকে অবজ্ঞা করেন এবং নিজের সম্পদেরঅহংকারে এমনকি কিয়ামতের দিনেও বিশ্বাস না করার কথা বলেন। কিন্তু তার সৎ প্রতিবেশী তাকে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার এবং নম্র হওয়ার পরামর্শ দেন। পরে অহংকারী ব্যক্তির বাগান ও সম্পদ ধ্বংস হয়ে যায়।

এই কাহিনিতে সৎ প্রতিবেশী দেখিয়েছেন নম্রতা। তবে মনে রাখতে হবে, নম্রতা নির্ভর করে অটল ঈমানের উপর। সত্যিকার ঈমান না থাকলে বান্দা আল্লাহর মহত্ত্ব বুঝতে পারে না এবং দুনিয়ায় তার অস্থায়ী অবস্থান সম্পর্কেও থাকেন উদাসীন। নবীজি (সা.) বলেছেন: ‘যার হৃদয়ে একটি পরমাণুর পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না... অহংকার হলো সত্যকে প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে তুচ্ছ করা।’ (জামে তিরমিযি, হাদিস: ১,৯৯৮) অহংকার দুনিয়া ও আখিরাতের ধ্বংস ডেকে আনে।


৩. উপকারী জ্ঞানের সন্ধান

তৃতীয় কাহিনিতে মুসা (আ.) ও খিজির (আ.)-এর মাধ্যমে জ্ঞানের পরীক্ষার কথা বলা হয়। একটি হাদিসে আছে: ‘একবার মুসা (আ.) বনি ইসরাইলের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, আমিই সবচেয়ে জ্ঞানী। আল্লাহ তাকে তিরস্কার করেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১২২)

মুসা (আ.) বিনয়াবনত চিত্তে নিজেকে সংশোধন করে খিজির (আ.)-এর কাছে জ্ঞান অর্জনের জন্য যাত্রা করেন। এই কাহিনিতে মুসা (আ.) দেখিয়েছেন উপকারী জ্ঞানের সন্ধানে ঘর ছাড়ার বিকল্প নাই। তবে জ্ঞানের সন্ধান বিনয় বা নম্রতার উপর নির্ভর করে। যারা বিনয়ী, তারাই তাদের ভুল স্বীকার করে এবং শিক্ষকের কাছে শিখতে যায়।

নবীজি (সা.) বলেছেন: ‘আল্লাহ যার জন্য কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭১; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১,০৩৭)। তিনি আরো বলেছেন: ‘যে জ্ঞানের সন্ধানে পথ চলে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৬৯৯)


৪. মানবতার সেবা

চতুর্থ কাহিনিতে যুলকারনাইনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন: ‘আমি তাকে পৃথিবীতে ক্ষমতা দিয়েছিলাম এবং তাকে সবকিছু অর্জনের উপায় দিয়েছিলাম।’ (সুরা কাহফ, আয়াত: ৮৪)

যুলকারনাইন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সাহায্য করতেন। একটি সম্প্রদায়, যারা ইয়াজুজ ও মাজুজের উৎপাতে কষ্ট পাচ্ছিল, তাদের সাহায্যে তিনি একটি প্রাচীর নির্মাণ করেন। তারা তাকে পুরস্কার দিতে চাইলে তিনি বলেন: ‘আমার রব আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছেন, তা যেকোনো পুরস্কারের চেয়ে উত্তম।’ (সুরা কাহফ, আয়াত: ৯৫)

প্রাচীরটি সম্পন্ন হলে তিনি বলেন: ‘এটি আমার রবের রহমত। কিন্তু যখন আমার রবের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হবে, তিনি এটিকে ধূলিসাৎ করে দেবেন। আমার রবের প্রতিশ্রুতি সবসময় সত্য।’ (সুরা কাহফ, আয়াত: ৯৮)

যুলকারনাইন দেখিয়েছেন মানবতার সেবা। এই গুণ নির্ভর করে জ্ঞানের সন্ধানের উপর। তিনি তার জ্ঞান ও ক্ষমতা মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করেছেন। নবী (সা.) বলেছেন: ‘আল্লাহ তার বান্দার সাহায্য করেন, যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৬৯৯)





আপনার মতামত লিখুন

logo
Top